কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে? কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোর পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ
ভূমিকা: কোনো গণসংখ্যা নিবেশনের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, কতগুলো রাশি বা মান বারবার সংঘটিত হচ্ছে। আবার কতগুলো রাশিকে অপেক্ষাকৃত কমবার সংঘটিত হতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় রাশিগুলো বেশি থাকে বা কেন্দ্রীয় শ্রেণিগুলোর গণসংখ্যা বেশি থাকে, অধিকবার সংঘটিত রাশিগুলো নিবেশনের কেন্দ্রীয় স্থানে (central Part) একটি ক্ষুদ্র পরিসরে পুঞ্জীভূত থাকে।
কেন্দ্রীয় প্রবণতা: কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে কেন্দ্রের দিকে আগমনের প্রবণতাকে বুঝায়। রাশিমালার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি অবস্থান করতে চায়। রাশিমালার কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি আসার প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ কেন্দ্রীয় প্রবণতার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো।
মাননান ও মেরির মতে, একটি গণসংখ্যা নিবেশনে যেসব তথ্য থাকে, সেগুলোকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ তথ্য বা সংখ্যাই একটি কেন্দ্রবিন্দুর দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ক্রাইডার-এর মতে, কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে X অক্ষের উপর একদল স্কোরের অবস্থানকে বুঝায়।
গণসংখ্যার কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের ক্ষেত্রে গড়, খ্যক ও প্রচুরক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গড়কে ফেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিযাপক হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের মাধ্যমে সহজেই উপায়গুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যায়
কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোর পার্থক্য
আমরা জানি, কোনো সংখ্যা বিন্যাসের কেন্দ্র নির্দেশক 'সংখ্যাবাচক মান হচ্ছে উক্ত বিন্যাসের কেন্দ্রীয় প্রবণতা। কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- গাণিতিক গড়, মধ্যমা এবং প্রচুরক।
গাণিতিক গড়: ১. গাণিতিক গড়ের সংখ্যা সহজবোধ্য এবং নির্ণয় পদ্ধতি সহজ
২. উন্মুক্ত শ্রেণিব্যবধান ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে গাণিতিক গড় নির্ণয় সম্ভব।
৩. গাণিতিক গড় পরবর্তী বীজগাণিতিক ক্রিয়ার উপযোগী
৪. গুণগত বৈশিষ্ট্যর ক্ষেত্রে গাণিতিক গড় নির্ণয় সম্ভব।
৫. লেখচিত্র হতে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা যায় না।
৬. এটি নমুনার তারতম্য অতি সামান্য।
৭. তথ্যসারির ছোট বা বড় মান দ্বারা গাণিতিক গড় প্রভাবিত হয়।
৮. দৈনন্দীন জীবনে গাণিতিক গড়ের ব্যবহার বেশি।
মধ্যমা: ১. মধ্যমার সংজ্ঞা সহজবোধ্য এবং নির্ণয় পদ্ধতিও সহজ
২. উন্মুক্ত শ্রেণিব্যবধান থাকলে মধ্যমা নির্ণয় করা সম্ভব।
৩. মধ্যমা পরবর্তী বীজগাণিতিক ক্রিয়ার উপযোগী নয়।
৪. গুণগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে মধ্যমা নির্ণয় করা সম্ভব।
৫. লেখচিত্র হতে মধ্যমা নির্ণয় করা যায়।
৬. এটি নমুনার তারতম্য বেশি।
৭. তথ্য সারির ছোট বা বড় মান দ্বারা মধ্যমা প্রভাবিত হয়ন।
৮. দৈনন্দিন জীবনে মধ্যমার ব্যবহার কম।
প্রচুরক: ১. প্রচুরকের সংজ্ঞা সহজবোধ্য এবং এটি দ্রুত নির্ণয় করা যায়।
২. উন্মুক্ত শ্রেণি ব্যবধান থাকলেও প্রচুরক নির্ণয় সম্ভব।
৩. প্রচুরক পরবর্তী বীজগাণিতিক ক্রিয়ার উপযোগী নয়।
৪. গুণগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে প্রচুরক নির্ণয় সম্ভব।
৫. লেখচিত্র হতে প্রচুরক নির্ণয় করা যায়।
৬. এটির নমুনার তারতমা বেশি।
৭. তথ্য সারির ছোট বা বড় মান দ্বারা প্রচুরক প্রভাবিত হয়।
৮. দৈনন্দিন জীবনে প্রচুরকের ব্যবহার কম।
কেন্দ্রীয় প্রবণতার বৈশিষ্ট্যসমূহ বা আদর্শ গড়ের বৈশিষ্ট্য
কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হলো কথাসারি কেন্দ্রীয় মান নির্ণয় করা যা সাধারণভাবে গড় নামে অভিহিত করা হয়। কেন্দ্রীয় প্রবণতার বৈশিষ্ট্য বা আদর্শ গড়ের বৈশিষ্টা নিচে দেওয়া হলো।
১. সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা: কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপসমূত্রের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হতে হয়। তাহলে কেন্দ্রীয় মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
২. নির্ণয় সংজ্ঞা: যে-কোনো গড় নির্ণয়ের উপযুক্ত হবে।
৩. কম প্রভাবিত: খুব বেশি বড় বা ছোট মান দ্বারা এটি কম প্রভাবিত।
৪. সহজ ব্যবহার: একটি উত্তম গড় সহজবোধ্য হবে এবং এটি সাধারণভাবে ব্যবহার করা যাবে।
৫. বীজগণিত বিশ্লেষণ: কেন্দ্রীয় প্রবণতা বীজগাণিতিক বিশ্লেষণের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং সহায়তা করে থাকে।
৬. উচ্চতর গণিত ব্যবহার: কেন্দ্রীয় প্রবণতা উচ্চতর গণিতে বিশ্লেষণের কাজে সহায়তা ও ব্যবহার হয়ে থাকে।
৭. নমুনাভিত্তিক তারতম্য: একটি আদর্শ গড় দ্বারা নমুনা ভিত্তিক মানে তার তাম্য ঘটবে না। অর্থাৎ, একই সমগ্রক থেকে একই আকারে ভিন্ন ভিন্ন নমুনা নিয়ে গড়ে নির্ণয় করলে নির্ণীত মানের তারতাম্য বেশি হবে না।
৮. আদর্শ মান : তুলনাকরণে এটি একটি আদর্শ মান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এগুলো অতি প্রয়োজনীয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কেন্দ্রীয় প্রবণতা বৈশিষ্ট্য বা আদর্শ গড়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ অনেক এবং উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি থাকলে তাকে উত্তম বা আদর্শ মান হিসেবে গণ্য করা হয় বা করা যেতে পারে।

No comments:
Post a Comment